Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

অফিস সম্পর্কিত

১.১ অবস্থান ও আয়তন

মাগুরা পূর্বতন যশোর জেলার একটি মহকুমা ছিল। এটি ১৯৮৪ সালে জেলায় উন্নীত হয়। এ জেলার উত্তরে ফরিদপুর অঞ্চলের রাজবাড়ী, পূর্বে ফরিদপুর, দক্ষিণে নড়াইল ও যশোর এবং পশ্চিমে ঝিনাইদহ জেলা অবস্থিত। এ জেলার আয়তন 1০৩৯.১০ বর্গকিলোমিটার (৪০১.1৯ বর্গমাইল) যার ৮৫.৮৫ বর্গকিলোমিটার (৩৩.1৫ বর্গমাইল) নদী অঞ্চল। এ জেলা 23১৫' থেকে 2৩৪১' উত্তর অক্ষাংশ এবং 89১৫' থেকে ৮৯৪২' পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে, জেলাটি খুলনা বিভাগের মধ্যে 8ম এবং দেশের 64টি জেলার মধ্যে ৫৭তম স্থানে রয়েছে।

মাগুরা জেলার ০৪ (চার)টি উপজেলা (মাগুরা সদর, মোহাম্মাদপুর, শালিখা, শ্রীপুর) এর মধ্যে মাগুরা সদর  হলো বৃহত্তম যার আয়তন ৪০১.৫৮ বর্গকিলোমিটার (15৫.০৫ বর্গমাইল), যা জেলার মোট আয়তনের ৩৮.৬৫% জুড়ে বিস্তৃত। শ্রীপুর হলো সবচেয়ে ছোট উপজেলা যার আয়তন ১৭৫.১৫ বর্গকিলোমিটার (৬৭.৬৩ বর্গমাইল) যা জেলার মোট আয়তনের ১৬.৮৬%। 

১.২ প্রশাসনিক ইউনিট

জেলা সদর দপ্তর মাগুরা শহরে অবস্থিত। জেলার অধীন ৪টি উপজেলা, ৩৬টি ইউনিয়ন, ৫৩১টি মৌজা, ১টি পৌরসভা ও পৌরসভার অধীন ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। 

 

১.৩ মৃত্তিকা

এই জেলায় ৩ (তিন) ধরনের মাটি রয়েছে যথা: (ক) পুরাতন গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির চুনযুক্ত পলি কাদামাটি (খ) মিশ্র পলিযুক্ত দো-আঁশ মাটি এবং (গ) মধুমতি নদী উপত্যকায় পুরাতন প্লাবন সমভূমি। জেলার উত্তরাংশে মাটি প্রথম গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। জেলার মধ্যাঞ্চল ও পূর্বাংশের মাটি যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। পলিযুক্ত দো-আঁশ মাটি আউশ ও রবি শস্য উৎপাদনের জন্য উপযোগী।

 

1.4 জলবায়ু

এ জেলার আবহাওয়ার মূল বৈশিষ্ট্য হলো শুষ্ক গ্রীষ্মকাল ও ঠান্ডা শীতকাল। গ্রীষ্মকাল যা এপ্রিল মাসে শুরু হয়ে জুন মাসে শেষ হয় তা খুবই গরম। সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ গড় বার্ষিক তাপমাত্রা 12.7 সেন্টিগ্রেড থেকে 3৬.৬০ সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকে। এ জেলায় বর্ষাকাল সাধারণত জুন মাসে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হয়। এ অঞ্চলে সাধারণত জুলাই-আগস্ট মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে জানুয়ারি'1৯ থেকে ডিসেম্বর'1৯ পর্যন্ত বার্ষিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৪৯২ মিমি।

 

1.5 নদীব্যবস্থা

মাগুরা জেলায় উল্লেখযোগ্য নদীসমূহের মধ্যে রয়েছে মধুমতি (গড়াই), কুমার, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেগবতি ও ফাটকী। নদীগুলোর বেশিরভাগই পদ্মার উপনদী। মরিবণ্ড বদ্বীপের কারণে এ নদীগুলোর গতিপথে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

 

 

1.6 খানা

কৃষি শুমারি ২০১৯ অনুযায়ী মাগুরা জেলার মোট খানার সংখ্যা ২৩০৪৩২ এবং এর মধ্যে কৃষি খানার সংখ্যা ১৫০২৭৯। উল্লেখ্য, কৃষি শুমারি ২০১৯ এ সাধারণ খানার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। 

 

1.7 অর্থনৈতিক অবস্থা

 

মাগুরার অর্থনীতি প্রধানত কৃষিনির্ভর। যারা কৃষি কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত তারা প্রধানত স্থানীয়  উচ্চ ফলনশীল এবং হাইব্রিড ধান, আখ, গম, শাকসবজি, মসলা, পাট, ডাল এবং অন্যান্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করে। জেলায় কলা, পেঁপে, তরমুজ, আনারস প্রভৃতি বিভিন্ন ফলেরও চাষ হয়। প্রায় সব ধরনের সবজি চাষ করা হয়। বিশেষ করে বেগুন, গোল আলু, ঢেঁড়স, করলা, কুমড়া (মিষ্টি কুমড়া) প্রচুর পরিমাণে চাষ করা হয়। এছাড়াও পল্লি খানাগুলোতে মৎস্যচাষ এবং গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগি পালনের মাধ্যমে বাড়তি আয় যোগ হয়। জেলায় বিভিন্ন জাতের প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে বর্ষাকালে নদী, উপনদী, এমনকি ধানক্ষেত থেকেও বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়। এ জেলায় কিছু মূল্যবান কাঠ ও বনজ গাছও জন্মে। প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কৃষি হলেও অকৃষিজ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও মাগুরা জেলাতে রয়েছে।

 

1.8.2 প্রাণিকুল

মাগুরা জেলায় কোন প্রাকৃতিক বন নেই। অতীতে প্রতিটি বসতবাড়ি ও  বাড়ির পিছনের দিকের উঠানে যে গাছপালা ও ঝোপঝাড় ছিল তা জ্বালানি কাঠ, বাড়ি এবং কৃষি সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র শিল্প নির্মাণের জন্য দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে  দেয়া হয়েছে। এখনো গ্রামগুলোতে কিছু ধরনের বাগান, ঝোপঝাড় এবং জঙ্গল রয়েছে, যা অনেক প্রকার বন্য প্রাণির আবাসস্থল। গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নির্বিচারে নিধনের ফলে গ্রাম্য প্রাণির সংখ্যা অনেকাংশে কমে গেছে। নানা ধরনের বন্য পাখি এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এখানে বিভিন্ন রঙ, আকার এবং স্বভাবের প্রচুর পাখি পাওয়া যায়। কাক, চিলের মতো উত্ত্যক্তকারী পাখি এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।  ঘুঘু, কবুতর, স্নাইপ, বগলা, পানকৌড়ি নামের খেলার পাখি সারা জেলায় পাওয়া যায়। তবে  এ  এলাকায় যে পাখিগুলো এখনো পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বড়ো সাদা বক (Ardea alba), কর্চি বক (Ardeola grayiiছোটো বক (Egretta garzetta), ডাহুক (Amaurornis phoenicurus), ভরত পাখি (Mirafra assamica), কোকিল (Eudynamus scolopacea)বুলবুলি  (Pycnonotus cafer), দোয়েল (Copsychus saularis) সারা জেলায়ই পাওয়া যায়। কোকিল, শ্যামা, দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও নাইটিঙ্গেলের মতো গায়ক পাখি বিভিন্ন ঋতুতে পাওয়া যায়। কোকিল সবচেয়ে জনপ্রিয় গায়ক পাখি আমাদের দেশে আছে। বসন্তের শুরুতে শরৎ ও শীতকালে বিদেশ থেকে অনেক পরিযায়ী পাখি আসে। গৃহপালিত হাঁস-মুরগি, কবুতর জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায়।

এই জেলায় কার্পস এবং অনেক ছোটো প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়। স্বাদু পানিতে জনপ্রিয় প্রজাতিগুলো হলো রুই বা স্যামন (Labeo rohita), কালবাউশ (Labeo calbaso), বোয়াল/শীট ফিশ (Wallago atttu), আইড় (Mystus aor), চিতল ((Notopterus chitala) ইত্যাদি। ছোটো মাছের মধ্যে রয়েছে সরপুঁটি (Puntius sarana), পাবদা (Ompok pabda), কই (Anabas testudineus),  মাগুর (Clarius batrachus), শিং (Heteropneustes fossilis), শোল (Ophicephalus striatus), চাপিলা (Gonialosa manmina) ইত্যাদি।
সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী: এখানে সাধারণত যেসব সাপ পাওয়া যায় সেগুলো হলো ঘার্গিনি সাপ (lycodonjara), মেটে সাপ (Atretium schistossum), বিভিন্ন ধরনের কোবরা, পানক এবং কিং কোবরা উঁচু জমি পছন্দ করে, পাইনা সাপ (Enhydris enhydris), জাত সাপ (Naja naja), কালী কাইট্টা (Hardella thurji), কড়ি কাইট্টা (Kachuga tecta tecta gray) ইত্যাদি দাঁড়াশ এবং শঙ্খুরও সাধারণত পাওয়া যায়। 

 

 

 

 

 

1.8 উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিকুল

1.8.1 উদ্ভিজ্জ

মাগুরা জেলার অধিকাংশ উপজেলা বদ্বীপের মধ্যে অবস্থিত। এই অঞ্চলে মাটির মধ্যবর্তী স্তরে বেশ কয়েকটি শিলা রয়েছে যা গঙ্গা নদীর পুরানো স্তর। এ অঞ্চলে মাটি চুনযুক্ত এবং কখনো কখনো মাঝারি ক্ষারীয়। শুধু জেলার শালিখা উপজেলাই মরিবন্ড বদ্বীপের একটি অংশ যেখানে মাটি বালুকাময়।
এ জেলায় অনেক কৃষি ফসল উৎপন্ন হয়। মাগুরা জেলার তিনটি প্রধান ফসল হলো আমন, আউশ ও বোরো। আমন বা শীতকালীন ধান মোটামুটি নিচু জমিতে চাষ করা হয় যেখানে বৃষ্টিতে এক থেকে তিন ফুট গভীর পর্যন্ত পানি থাকে। আমনের চেয়ে উঁচু জমিতে আউশ ধান বোনা হয়। বোরো ও গম প্রধানত গভীর নলকূপ সেচ দিয়ে চাষ করা হয়। পাট ও আখ প্রধান অর্থকরী ফসল। প্রধান রবি শস্য হলো বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন: মসুর, ছোলা, খেসারি, মাষকলাই, অড়হর ইত্যাদি। তৈলবীজের মধ্যে সরিষা সবচেয়ে বেশি জন্মে। মাগুরায় সরিষার আবাদ সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় অন্যান্য ধরনের যে তেলবীজ জন্মে তা হলো তিল এবং তিসি । পেঁয়াজ, মরিচ, ধনিয়া এবং টারমারিক প্রভৃতি মসলা এ জেলায় ব্যাপকভাবে জন্মে।
বসতবাড়িতে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ ও ফলের গাছ রয়েছে। আম, কালোজাম, কাঁঠাল, কলা, নারিকেল, কমলা, পেঁপে (Carica papaya), তাল, লিচু, খেজুর, তরমুজ, পেয়ারা, জাম্বুরা (Citrus maxima), বরই (Ziziphus mauritiana), সুপারি (Areca catechu), কামরাঙা (Averrhoa carambola) এবং তেঁতুল (Tamarindus indica) এ জেলায় জন্মে। বিভিন্ন জাতের প্রচুর ফুল গাছ যেমন: গন্ধরাজ (Gardenia jasminoides), পলাশ, শিমুল, রজনিগন্ধা, বেলি (Jasminum sambac), হাসনাহেনা (Cestrum nocturnum), কামিনী (Murraya paniculata), হলদে করবী (Thebetia peruviana) এবং বিভিন্ন প্রকারের গোলাপ ফুল এ জেলায় জন্মে।  

অন্যান্য গাছ যা বসতবাড়ি ও পল্লি অঞ্চলে পাওয়া যায় তা হলো  নিম (Azadirachta indica), সাজনা (Azadirachta ndica),, সোনালু (Cassia fistula), লটকন (Bixa orellana), গাব (Diospyros montana), ডুমুর, (Ficus hispida),  শেওড়া (Streblus asper), পিতরাজ (Aphanamaxis polystachya), পলাশ (Butea monosperma), মান্দার (Erythrina Variegata), ভাদি (Lannea oromandelica), দেবদারু (Polyalthia longifolia), বড়ো মেহগনি (Swietenia macrophylla), তমাল (Diospyros Montana), মেহেদি (Lawsonia inermis), মনকাঁটা (Xeromphis spinosa) ইত্যাদি।

রাস্তার পাশের সাধারণ গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে কদম (Anthocephalus chinensis), কাঠবাদাম (Terminalia catappa), অর্জুন (Terminalia arjuna), রেণ্ডি কড়ই (Samanea saman), নাগেশ্বর (Mesua ferrea), বট (Ficus benghalensis), অশ্বত্থ (Ficus religiosa), কৃষ্ণচূড়া (Delonix regia), তাল (Borassus flabellifer) ইত্যাদি।

হিজল (Barringtonia acutangula), জারুল (Lagerstroemia speciosa), বরুন (Crataeva magna), বাবলা (Vachellia nilotica) ইত্যাদির মতো কিছু গাছও জেলার জলের ধারে পাওয়া যায়।